ইট পাটকেল

বারান্দার সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রেখেছে আশমিন। নূরের কোন কথাই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে নি। সেসব নিয়ে মাথা ও ঘামাচ্ছে না সে।তার বর্তমান মাথা ব্যথার নাম লারা।এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক দিনেই মাথা খেয়ে দিল।কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে মাথা সোজা করে বসলো সে।সামনেই কাচুমাচু করে সানভি দাঁড়িয়ে। কি বুঝে যে এই ছেলেটা কে নিজের পি.এ. করেছে আজো মাথায় আসে না।
–কি বলবে বলো।
আশমিনের গম্ভীর গলা শুনে শুকনো ঢোক গিললো সানভি। ভয়ে ভয়ে বললো,
— ম্যাম কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না স্যার।
তরাক করে বন্ধ চোখ খুলে ফেললো আশমিন।রক্তিম চোখে তাকাতেই কাপা কাপি শুরু হয়ে গেলো সানভির।আশমিন নিজের ফোনে দৃষ্টি রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
— নূর রুমেই আছে সান।অযথা আমার সময় নষ্ট না করে বাকি দিকটা সামলাও।
— আমি লারা ম্যামের কথা বলছি স্যার।
সানভির তারাহুরো জবাব।
বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো আশমিনের।তবে চেহারায় তার রেশ মাত্র নেই।শান্ত ভঙ্গিতে শুভ্র পাঞ্জাবির পকেট থেকে রি*ভালবার বের করে শান্ত গলায় বললো,
— ওই মেয়েকে আরেকবার ম্যাম বললে এই রি*ভালবারের একটা গু*লি তোমার নামে দান করে দিবো। বুঝে শুনে কথা বলবে এর পর থেকে। ঠিক আছে?
তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সানভি।যে লোক কোল্ড ড্রিংক খেতে খেতে ঠান্ডা মাথায় খু*ন করতে পারে তার দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। প্রানের নিশ্চয়তা থাকলে এই চাকরি সে কবেই ছেড়ে দিতো।এসবে এমন ভাবে জরিয়ে গেছে যে চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। আশমিনের ছায়া মাথা থেকে উঠতেই সে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে।
— লারা কে আমি সরিয়েছি।তাই চিন্তা বাদ দাও।
— ঠ ঠিক আছে স্যার।তবে অভয় দিলে আরেকটা কথা বলতাম।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো সানভির দিকে।সাথে সাথেই সানভি গড়গড় করে সব বলতে শুরু করলো,
— আপনি লারা কে যে গোডাউনে রেখেছিলেন সেখানে সে নেই স্যার।আমাদের গার্ডদের চোখ ফাকি দিয়ে কেউ তাকে নিয়ে গেছে।আশেপাশের সব জায়গায় খোঁজ চলছে কিন্তু কোন আশানুরূপ খবর এখনো পাই নি।
আশমিন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো, কাজ টা তুমি ঠিক করলে না নূর।আমার কাজে বাম হাত ঢোকানো আমি পছন্দ করিনা। আমার অপছন্দের কাজ গুলোই তুমি সবচেয়ে বেশি করো।ফলাফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকো।চোখ বন্ধ রেখেই সানভি কে বললো,
— এই মুহুর্তে শুধু আমার মায়ের কাছে এই খবর টা পৌঁছে দাও যে,বউ পালিয়েছে।আর অন্দরমহল খালি করে দাও।শুধু আমার কাছের মানুষ গুলো ছাড়া আর কেউ যেন না থাকে।
— ওকে স্যার।
হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে গেলো সানভি।রাত তিনটায় আড়ামের ঘুম বাদ দিয়ে এসব করতে হচ্ছে। কালার ফুল প্রজাপতির মতো সুন্দরী মেয়েরা এদিক সেদিক উড়ে বেরাচ্ছে।অথচ তার সেদিকে নজর দেয়ার ও সময় নেই।এই জীবন রেখে কি হবে।এর চেয়ে সন্যাসী হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ঢেড় ভালো।।
ভোর রাতে মিসেস কামিনী চৌধুরীর বিলাপে ঘুম ভাঙলো সবার।আশমিন একমনে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরের রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে সে। ফোনের স্ক্রিনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সে।নূর ঘুমাচ্ছে। ঠিক দু মিনিটের মাথায় আলসে ভঙ্গিতে উঠে বসলো নূর।চুল গুলো মেসি বান করে আড়মোড়া ভেঙে ফিচলে হাসলো। হেলেদুলে এসে আশমিনের সেট করা ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে দুই ঠোঁট উচু করে চুক চুক শব্দ করে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। আশমিন হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে। এই মেয়েটা এতো বিধ্বংসী হলো কবে থেকে! নূর নিজের হাসি থামিয়ে চেহারা দুঃখী দুঃখী করে ফেললো। আফসোসের স্বরে বললো,
— আহারে!মন্ত্রী সাহেবের বউ পালিয়েছে বুঝি?এখন কি হবে?প্রেস, মিডিয়া তো মন্ত্রী সাহেব কে বদনাম করে দিবে।আপনি চিন্তা করবেন না মন্ত্রী সাহেব, আমি কোন ভাবেই আপনাকে বদনাম হতে দিবো না।আমি ওয়াদা করেছিলাম তো!আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকবো।লুক,আম হেয়ার।
নূর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার দশ মিনিটের মাথায় সমস্ত শোরগোল থেমে গেলো। পুরো দমে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলো।
বিশাল বাগানের মধ্যে বরের গোসলের প্রস্তুতি চলছে। এক সাইডে নূরের ব্যান্ড একের পর এক গান পারফর্ম করে যাচ্ছে। আজকে নূর এখনো স্টেযে উঠে নি।সে আশমিনের আসার অপেক্ষায় আছে। তার পারফরম্যান্স শুরু হবে আশমিন আসার পর পর।
কয়েক মুহুর্ত পরে আশমিন উপস্থিত হলো বাগানে।শুভ্র পাঞ্জাবিতে রাজকুমারের মতো লাগছে তাকে।হলদেটে গায়ের সাথে পাঞ্জাবি টা অসাধারণ ভাবে মানিয়ে গিয়েছে।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকেই স্থির। নূর মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়লো। আশমিন বাকা হেসে গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দাড়াতেই মহিলারা তাকে আবারও হলুদ মাখিয়ে দিলো।স্টেজে তখন শুভ বিবাহ গান বাজছে।আমজাদ চৌধুরী হাক ডেকে নূর কে বললো,
— এদিকে আয় তো তেহজিব মা।আশমিন কে হলুদ লাগিয়ে দে।
নূর শয়তানি হেসে হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে এলো। নূর কে আসতে দেখে মহিলারা একপাশ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। আশমিন শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে। নূর আশমিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো,
“আমার জায়গায় বসিয়েছো অন্য কাউকে যেমন
তোমার জায়গা ও দিয়ে দিবো অন্য কাউকে তেমন।
আশমিনের গালে হলুদ লাগিয়ে দিতেই আশমিন নূরের হাত চেপে ধরলো। হেচকা টানে নূর কে ঘুড়িয়ে নিলো।সাথে সাথে আশমিনের বুকের সাথে নূরের পিঠ লেগে গেল। আশমিন হালকা নিচু হয়ে গুন গুন করে গাইলো,
” tera muskurana,
nazar yu jhukana,
mere liye he bass, mere liye hai.
নূরের গালে নিজের গাল ঘষে দিলো।নূর বাকা হেসে সামনে বসে থাকা কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকালো।সে কটমট করে তাদের দিকেই তাকিয়ে।লারা কে এখনো পাওয়া যায় নি।নূর তাদের আশ্বাস দিয়েছে,সে সময় মতো লারা কে বধু বেসে উপস্থিত করবে।কামিনী চৌধুরী জানেন নূর নিজের কথা রাখবে।তবুও নিশ্চন্ত হতে পারছেন না।আশমিনের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না। ভালোয় ভালোয় বিয়ে টা মিটে গেলেই হলো।
আশমিন নিজের রুমে দাঁড়িয়ে। বর বেশে তাকে কোন দেশের রাজা লাগছে। কিছু একটা ভেবে শয়তানি হেসে বিরবির করলো,
–তোমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দিবো তেহজিব, ঠিক যেমন আজ আমার হৃদয়ে ঝড় উঠেছে। ঝড়ের তান্ডবে যেমন শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে ঠিক তোমাকেও সেভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো। তবে তোমার মতো আমি একা ছাড়বো না তোমাকে। খুব যত্নে কুড়িয়ে নিবো বাহুডোরে।আজ যেমন তুমি আমাকে শূণ্যতার মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলেছো।ঠিক আমিও তোমাকে আমার হৃদয়ের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলবো।দেখা হবে শীঘ্রই,,,
আশমিনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।বর বেশে বসে আছে সে।পাশেই তার বাবা মলিন মুখে বসে।প্রেস মিডিয়া চারিদিকে গিজগিজ করছে। সামিয়ানার ওপাশে লারা বধু বেশে উপস্থিত। নূর সামনেই দাঁড়িয়ে। মুখে তার ক্রুর হাসি।আশমিন হঠাৎ করেই খুব হাসি হাসি মুখ করে তাকালো নূরের দিকে। হচকচিয়ে গেলো নূর। এর মধ্যেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে।লারা কে কবুল বলতে বললে লারা ভীতু চোখে আশমিনের দিকে তাকালো।আশমিন হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কবুল বলতে বললো। লারা কাপা কাপা গলায় কবুল বলে দিলো।আমজাদ চৌধুরী মুখ কাল করে ফেললো। হঠাৎ করেই আশমিন চিৎকার করে উঠল।

— কি হয়েছে আব্বু?বুকে ব্যথা করছে? চিন্তা করো না।আমি এখনি তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
আশমিনের চিৎকার শুনে আমজাদ চৌধুরীর হাত এমনিতেই বুকে চলে গিয়েছিল। সে এখন হতভম্ব চোখে আশমিনের দিকে তাকিয়ে। আশমিন ফিসফিস করে বললো,
— যদি চাও এই মেয়েকে বিয়ে করে সত্যি সত্যি তোমাকে হার্ট অ্যাটাক না দেই তাহলে আমার সাথে এই মুহুর্তে হসপিটালে চলো।
আমজাদ চৌধুরীর এবার সত্যিই বুকের ব্যথা শুরু হয়ে গেলো।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.